আল জাজিরা জানিয়েছে যে বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইয়েমেনের আনসারুল্লাহকে মোকাবেলায় এক অচলাবস্থায় পৌঁছেছেন এবং সম্ভবত তার আঞ্চলিক সফরের আগে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করবেন।
পার্সটুডের মতে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইয়েমেনি অঞ্চল এবং শহরগুলোতে প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে ব্যাপক মার্কিন হামলার পর ইয়েমেনি আনসারুল্লাহ বাহিনী লোহিত সাগরে এবং ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলি সরকারের যুদ্ধের উপর এই হামলা বন্ধ করার বিষয়টি নির্ভর করছে। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি উত্তর লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহর বিশেষ করে ইউএসএস ট্রুম্যানের উপর হামলার ঘোষণা দিয়েছেন। এর জবাবে আমেরিকান যুদ্ধবিমানগুলো হোদেইদাহ প্রদেশের রাস ইসা তেল বন্দরে বোমা হামলা চালায়।
এই প্রসঙ্গে, আল জাজিরা সেন্টার ফর স্টাডিজের একজন সিনিয়র বিশ্লেষক লিকা মাক্কি বলেন, "ইয়েমেনের উপর আক্রমণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চরম পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে কারণ তারা ঘোষণা করেছে যে তারা যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারবে না এবং একটি বিকল্প খুঁজছে অর্থাৎ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ বন্ধ করতে চাইছে।"
তিনি আরও বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অচলাবস্থায় পৌঁছেছেন এবং এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ইয়েমেনের প্রতিরোধের বিষয়ে তিনি যে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছিলেন তা অবাস্তব। সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ব্যর্থ হয়েছে।"
আল জাজিরা সেন্টার ফর স্টাডিজের এই জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে ট্রাম্পের এই অঞ্চলে সফরের আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা যেতে পারে যাতে ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন তাদের আক্রমণ বন্ধ করে বিশেষ করে যেহেতু তারা তাদের আক্রমণ বন্ধের শর্ত দিয়েছে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা এবং মার্কিন আক্রমণ বন্ধ করা।
সামরিক ও কৌশলগত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইলিয়াস হান্নাও এই প্রসঙ্গে বলেন, "সামরিক আক্রমণের মাত্রা এবং ইয়েমেনে আনসার আল্লাহর সাথে যুদ্ধে ট্রাম্পের প্রবেশের কারণে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন: ইয়েমেনি প্রতিরোধ মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের কোন মহৎ কৌশলের অভাব রয়েছে এবং এই অঞ্চলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং জাহাজ চলাচলের রুট পুনরায় চালু করার ঘোষিত রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইলিয়াস হান্না উল্লেখ করেছেন, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের লক্ষ্য অর্জনে অক্ষমতার কারণে গাজায় সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ সৃষ্টি করছে তার লক্ষ্য হল ইয়েমেনের আনসারুল্লাহকে লোহিত সাগরে এবং ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে তাদের আক্রমণ বন্ধ করতে রাজি করানো অন্যদিকে ট্রাম্পের এই অঞ্চলে আসন্ন সফরের জন্য পরিস্থিতি শান্ত করা প্রয়োজন।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদন অব্যাহত রেখেছে এই বলে যে কিছু প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয় যে যুদ্ধের প্রথম তিন সপ্তাহে ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার খরচ প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ছিল।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি আরও জানিয়েছে যে ইয়েমেনে ভূপাতিত সাতটি আমেরিকান ড্রোনের মূল্য ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং আমেরিকার ড্রোনের ক্রমাগত ক্ষতির কারণে আনসার আল্লাহর অস্ত্র ভাণ্ডারের ক্ষতির সঠিক অনুমান নির্ধারণ করা আমেরিকান কমান্ডের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।#
Your Comment